ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৯/০৩/২০২৪ ৯:৫৮ এএম

ওমর ফারুক হিরু ::
‘ভুল মানুষকে ভালবেসেই জীবন আমার নষ্ট। ২০১৯ এর দিকে মোবাইলের মাধ্যমে প্রেম হয় রফিকের সাথে। ভালবাসার টানে পরিবারকে ত্যাগ করে তার কাছে ছুটে এসেছিলাম। এটাই ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ জানতাম না আমার ভালবাসার মানুষ হলেন একজন মাদকাসক্ত, ছিনতাইকারী ও পতিতার দালাল। পরে সব জানার পরেও আর কোন উপায় না থাকায় তার সাথে সংসার করতে চেয়েছি। আমাদের কিছুদিন ভাল গেলেও একরাতে সে আমাকে আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেই থেকে তার উপর মন উঠে যায়। এই অবস্থায় না ফিরতে পারছি বাড়িতে না পারছি রফিকের সাথে থাকতে।

তাকে নিয়ে কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীর যে ভাড়া বাসায় থাকতাম ওই বাসার টাকাও আমাকে দিতে হত। সে প্রতিনিয়ত আমাকে মারধর করত পতিতাবৃত্তি করে টাকা ইনকাম করার জন্য। আমার এই কষ্টের টাকায় সে মাদক সেবন করত। পরে তাকে ছেড়ে অন্যজনের কাছে যাই। কিন্তু সেও একই অবস্থা। কোথাও আর যাওয়ার জায়গা নেই। এরমধ্যে ৫ বছর অতিবাহিত হয়ে গেল এই পেশায়। সমাজে কিছু মানুষরূপী পশু আছে। যারা প্রয়োজন পর্যন্ত বুকে রাখে তারপর ছুঁড়ে ফেলে দেয়।’
জীবনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব কথা বলছিলেন যৌনকর্মী চম্পা আক্তার (ছদ্মনাম)। শুধু চম্পা আক্তার বলে কথা নয় শহরের একেক যৌনকর্মীর জীবণের গল্প একেক রকম। কেউ খুশিতে এই পেশায় আসেনি।
কক্সবাজার শহরের লালদিঘীর পাড়স্থ অন্তত ১০ যৌনকর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা চরম ঘৃণা, লাঞ্চণা আর ঝুঁকির মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে। তারা চিকিৎসা সহ সব ধরণের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের কেউ ঘর ভাড়া দিতে চায়না। তাদের সন্তানদের স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়না। তাদের কোমলমতি শিশুদের লোকজন মন্দ কথা শোনায়।

তার মধ্যে ছিনতাকারী, দালাল ও মাদকাসক্তদের চরম অত্যাচার। রাত যত গভীর হয় ততই ভয়ংকর হয়ে উঠে যৌনকর্মীদের জীবন। ছিনতাইকারী, দালাল আর মাদকাসক্তরা এসে জোরপূর্বক যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি টাকা ছিনিয়ে নেয়। তারা ছুরিকাঘাত করে আহত করে। অনেক যৌনকর্মী খুন’ও হয়েছে।
তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী , গত ২ বছরে জোহুরা খাতুন, ময়না বেগম ও মিম খুন হয়েছে। যাদের লাশ বিভিন্ন হোটেল ও কটেজে পাওয়া যায়।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, সম্প্রতি কিছু দালাল ও প্রশাসনের সোর্স নামধারী লোক তাদের কাছে চাঁদা দাবী করে। যাদের মধ্যে রাসেল নামে এক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। যিনি নিজেকে ডিবি অফিসের লোক পরিচয় দেন। তিনি চাঁদার জন্য যৌনকর্মীদের সাথে নোংরামীর পাশাপাশি মারধর করে।
কয়েকজন যৌনকর্মী জানান, এই মুহূর্তে তাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থাভাবে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না। এই পেশায় যে টাকা আয় করে তা দিয়েই জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছে । তারমধ্যে চিকিৎসার খরচ চালানো সম্ভব হয়ে উঠছেনা। এমনকি অনেক সময় তাদের সন্তানদের ঠিকমত খাওয়াতে পারছেনা।
যৌনকর্মীদের কেউ সহযোগিতা করে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, অনেক সংস্থা এসে নানা আশার কথা বলে যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেনা। তারা এসে মাঝে-মধ্যে কিছু কনডম এবং ব্যাথার ওষুধ দিয়ে চলে যায়। এর বাইরে তেমন কোন সহযোগিতা নেই।
যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট মো. নাজমুল হক জানান, তারা যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে। তবে এই কাজ অনেক চ্যালেঞ্জের। তাদের সংস্থার পক্ষ থেকে আরো উন্নত সেবা প্রদান করা হবে।
শহরের লালদিঘীর পাড় এবং হোটেল-মোটেল জোন কেন্দ্রিক শতাধিক যৌন কর্মী রয়েছে। তারা শহরের সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, টেকপাড়া, বৈধ্যঘোনা ও পাহাড়তলী সহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন। তারা নিরাপদ ও সুস্থ জীবন প্রত্যাশা করছেন এই সমাজের কাছে।

পাঠকের মতামত

উখিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই – জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বিবৃতি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষাপটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতি দিয়েছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ...

ইসলামপুরে আটক রোহিঙ্গা যুবককে কুতুপালং ক্যাম্পে হস্তান্তর

জামালপুরের ইসলামপুরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার মো. রোবেল (২২) নামের সেই রোহিঙ্গা যুবককে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের ট্রানজিট ...